জাগো নিউজ ::
>> মিয়ানমার থেকে প্রবেশ করেছে পেঁয়াজভর্তি ১৫টি ট্রলার
>> সোমবার পর্যন্ত টেকনাফ দিয়ে এসেছে ৩৫৭৩ টন
>> চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে তিন লাখ ৬৪ হাজার কেজি পেঁয়াজ
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। পেঁয়াজ রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ায় এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে। এক রাতের ব্যবধানে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এতে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি ১০০ টাকা ছুঁলেও বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন বলছেন, দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের সন্তোষজনক মজুত রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা মজুত করবেন এবং বাজার অস্থির করার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সন্তোষজনক মজুতের কথা বললেও ভারত বাদে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকার। সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার কেজি পেঁয়াজ। কনটেইনারে করে আমদানি করা এসব পেঁয়াজ খালাসের প্রক্রিয়া চলছে। মিসর ও চীন থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সোমবার পর্যন্ত টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে তিন হাজার ৫৭৩ টন। খালাসের অপেক্ষায় আছে পেঁয়াজভর্তি ১৫টি ট্রলার।
মিয়ানমার থেকে রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হলেও এখনও স্থানীয় বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম কমেনি। অতিরিক্ত মুনাফালোভীরা যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে পেঁয়াজ।
দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জ থেকে একপ্রকার উধাও হয়ে গেছে পেঁয়াজ। ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ হওয়ার বিষয়টি জানার পর খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানিকারকদের সিদ্ধান্ত না জেনে পেঁয়াজ বিক্রি করবেন না তারা। এর মাঝে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লাফ দিয়ে বাড়ে পেঁয়াজের দাম।
জানা গেছে, বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা গত কয়েক দিনে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারের বাইরে গুদামজাত করেছেন। মূলত ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে- এ খবর চট্টগ্রামে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে ‘উধাও’ হয়ে যায় পেঁয়াজ। গতকাল রোববার সকালেও খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রি হলেও সন্ধ্যার পর পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়।
এদিকে রফতানি বন্ধ ঘোষণার খবর পাওয়ার পর রোববার রাতে পেঁয়াজভর্তি ১৬টি ট্রাক ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে হতাশাজনক পেঁয়াজের বাজারে আশা জাগিয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা। এখানকার ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, গত কয়েক সপ্তাহ থেকে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে তিন হাজার ৫৭৩ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। খালাসের অপেক্ষায় হাজারের অধিক টন পেঁয়াজ ভর্তি ট্রলার বন্দর ঘাটে নোঙর করে আছে। পেঁয়াজভর্তি আরও একাধিক ট্রলার স্থলবন্দরের পথে মিয়ানমার থেকে রওনা দিয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরকেন্দ্রিক আমদানিকারকরা অভিযোগ করেছেন, শ্রমিক অপর্যাপ্ততার কারণে পেঁয়াজবোঝাই ১০-১২টি ট্রলার এখনো বন্দরে নোঙর করে আছে। শ্রমিক সংকটের কারণে পেঁয়াজগুলো ট্রলার থেকে খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য বন্দরের শ্রমিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজগুলো স্থানীয় বাজারে চাহিদা মেটানোর পর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। সেখান থেকে একাধিক হাত বদল হয়ে পেঁয়াজ সরবরাহ হবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
অভিযোগ উঠেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পেঁয়াজ গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিয়ানমারের রফতানিকারকরা টনপ্রতি গড় দাম ৩৫ হাজার টাকায় টেকনাফ স্থলবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে। আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করে মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ টেকনাফ বন্দর কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত কেজিপ্রতি গড় দাম দাঁড়ায় ৩৫ টাকা। কিন্তু টেকনাফের স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম হাঁকাচ্ছেন ৮০ টাকা। কক্সবাজার শহর, বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজারসহ প্রসিদ্ধ বাজারগুলোতে ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে পেঁয়াজের কেজি।
টেকনাফ পাইকারি বাজারের হারুন সওদাগর, নবী সওদাগরসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বন্দরের আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৭০ টাকায় কিনছি। টেকনাফ বাজারে এনে ১০ টাকা লাভে ৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। তবে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসার পর দাম কমবে।
সাধারণ ক্রেতারা জানান, মিয়ানমার থেকে কম দামে পেঁয়াজ আমদানি হলেও অদৃশ্য কারণে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে না। মিয়ানমার থেকে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে তাতে পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা পেরোনোর কথা নয়। অথচ ওসব পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
ঈদগাঁও কলেজ গেট এলাকার ব্যবসায়ী শাহ আলম সওদাগর বলেন, দুদিন আগেও ৫০ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছি। সোমবার পেঁয়াজ আনতে গিয়ে দেখি পাইকারি দাম চাচ্ছে ১০০-১১০ টাকা। ফলে পেঁয়াজ না কিনেই ফিরে এসেছি।
টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা মো. আবছার উদ্দিন বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে। সোমবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৭৩ টন পেঁয়াজ বন্দরের কার্যক্রম শেষ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঘাটে পেঁয়াজভর্তি ১৫টি ট্রলার নোঙর করা আছে। বন্দরের উদ্দেশ্যে মিয়ানমার ছাড়ছে আরও বেশ কয়েকটি ট্রলার। ফলে পেঁয়াজ আমদানি বাড়বে। এরপর দাম কমবে।
পাঠকের মতামত: